বারি পূজা র(মনসা) প্রকৃত/ উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা ও বৈজ্ঞানিক কারন:- ============================== লেখা - সঞ্জয় কুমার মাহাত( হিন্দোইয়ার) °°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°° আপনি জানেন কি? কুড়মি সমুদায় এর প্রত্যেক পরব - তিহার,পূজা - পাঠ, নেগ - নেগাঁচার এমন কি খাওয়া - দাওয়ার মধ্য দিয়েও কিছু না কিছু কারন লুকিয়ে আছে।। তা কেও জানার প্রয়োজন মনে করে না।ওই চলছে আর চলছে কিন্তু কি কারনে যে করে কেন করে, কি উদেশ্য কেও জনেই না।। ••আজ বারি পূজা/ মনসা পূজা নিয়ে কিছু কথা :- বারি অর্থাৎ জল,বারি পূজা একচুয়েলি জল দেবীর / জল শক্তির পূজা।যা বর্তমানে মনসা পূজা বা সর্প দেবীর পূজা নামে সবাই জানে। বারি পূজা( মনসা) বিশেষত চাষ আবাদ শেষ হওয়ার পরেই অর্থাৎ রূপা মাসের শেষের দিকেই পালন করা হয়ে থাকে।কিছু কিছু পরিবারে দেখা যাই চাষ আবাদ শেষ না হলে এই পূজা করেই না। তা হলে এখানে বুঝা যাচ্ছে এটা একটা কৃষি কেন্দ্রিক পূজা। চাষ আবাদ/ কৃষি কর্মএর সঙ্গে জলের গুরুত্ব বা জলের প্রয়োজন সর্ব প্রথমে আসে।আর জলের মধ্যে অনেক জীব - জন্তু,কীটপতঙ্গ থাকে সেগুলি জল ব্যতীত বেঁচে থাকা অসম্ভব এবং ওই জীব জন্তু গুলি বেঁচে থাকারও প্রয়োজন আছে।যেমন কেঁচো চাষের সঙ্গে অঙ্গা অঙ্গী ভাবে জড়িত।জলের মধ্যে থাকা জীব - জন্তু গুলি বাচার সাথে সাথে আমাদের প্রধান সম্পদ চাষ আবাদ/ ফসল রক্ষা করে একমাত্র জল( বারি) ।এক কথাই বলা যায় জল ছাড়া চাষ আবাদ করা অসম্ভব।সে কারণেই আমাদের পূর্ব পুরুষেরা বংশ পরম্পরা চাষের শেষে জল দেবী কে সন্মধন জ্ঞেপণ বারি পূজা অর্চনা করে আসছে আদি কাল থেকেই ।যা বর্তমানে মনসা পূজা নামে জানা যাই। বর্তমান সময়ে বারি পূজা(মনসা) ব্রামনের কুটিল সড়যন্ত্রে ওদের লাভের জন্য ওদের যাতে "দান - মান - সন্মান" বজায় থাকে সেকারণে মনগড়া/ কাল্পনিক কাহিনী সাজিয়ে ধর্মের নামে আমাদের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে ওদের সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে এক বিশাল মানব রুপী মূর্তি মনসার সৃষ্টি করেছেন।যা বাস্তবিক "বারি পূজার" সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।বারি পূজা কোন নতুন প্রথা নয়।এটা আমাদের পূর্ব পুরুষদের সময় থেকেই চলে আসছে,কিন্তু বর্তমানে যে মনসা মূর্তি পূজার বাড়বাড়ন্ত যা ৪০-৫০ সাল আগে হত না।তাই বলছি লোক দেখানো ফালতু খরচ খরচা থেকে বাঁচুন এবং শ্রদ্ধা থেকে মন থেকে ওই প্রকৃতি রূপকে ধন্যবাদ জ্ঞেপন "বারি পূজা" আরাধনা করুন । •• বারি(মনসা) পূজাতে হাঁস বলির কারন:- আমাদের কৃষি কার্য জল ছাড়া সম্ভব নই।চাষের সময় আমাদের মাঠে - ঘাটে,খেতে - ক্ষামারে,নদী - নালা, বাঁধ - পুকুরে কাজ করতে হয়।বর্ষার সময় জলের মধ্যে অনেক ছোট বড় কিট - পতঙ্গের সঙ্গে দেখা/ মুলাকাত হয়ে থাকে এবং অনেকে কিট - পতঙ্গের শিকারও হয়ে যায়,এবং এখনো দেখা যায় চাষের সময় মাঠে - খেতে,নদী - নালাতে কৃষক গণ অনেক সময় জল পান করে থাকে।আগেতো অধিকাংশই চাষের সময় খেতে - নদী - নালাতে - পুকুরে জল পান করত।তাই মাঠে ঘাটে থাকা জীব জন্তুর বিষ থেকে বাঁচার জন্য চাষের শেষে হাঁসের মাংস "বারি পূজার" সময় খেয়েথাকে।হাঁসের মাংস ও রক্ত মেডিসিনের মত কাজ করে।আপনারা শুনে থাকবেন হাঁসের মাংস ও রক্ত "লিভার টনিক" এর কাজ করে,এবং পেটের মধ্যে থাকা কৃমি কে নষ্ট করে।জলের মধ্যে থাকা "জোক" যদি মানুষের শরীরে লেগে যায়,তাহলে জোক মানুষের রক্ত চুষে খাই এবং শরীর থেকে সহজে উঠে না।কিন্তু সেখানে হাঁসের রক্ত প্রয়োগ করলে সহজেই উঠে যায়।তাই আমাদের পূর্ব পুরুষেরা চাষের শেষে বারি পূজার সময় হাঁস বলির প্রথাটা প্রচলন করেছেন । •• মূর্তি পূজার লাভ/ লোকসান:- এখন প্রতি গ্রামে গ্রামে মিনিমাম ৪-৫ জায়গাতে কম করে এর বেশিও হতে পারে মনসার মূর্তি পূজা করে থাকে ।আজকাল ত কম্পিটিশন করে মূর্তি পূজা হচ্ছে কাদের মূর্তি কত বড়।তাহলে চার - পাঁচ টি মূর্তির বিসর্জন করা হয়, তাহলে কম করে এক ট্রাক্টর মাটি আমাদের জলাশয়ে বা পুকুরে দেওয়া হচ্ছে, তা আবার প্রতি বছর।এর ফলে পুকুরের গভীরতা দিন দিন কম হচ্ছে।।অন্য দিকে আমাদের কুড়মি সংস্কৃতি নেগাচারিতে বারি পূজাতে কেবলমাত্র কিছু তুলসী আর বেলপাতা এবং কিছু ফুল দিয়ে করা হয়।যা বিসর্জন করলে জল শুদ্ধ হযে যায় এবং শেষে পাতা গুলি পঁচে মাছের খাবার হয়ে যায়,এতে করো কোন লোক শান নেই। •••এই সব নেগ নেগাচার গুলো সব বুড়া বাবার দান| " জয় বুড়া বাবা" জয় গরাম" জয় বুড়ি মাঁয়"
ইতিহাসে নিজের নাম লেখাতে কে না চায়! কিন্তু এই খ্যাতিতে নাম তুললে যতটা সহজে মানুষের মনে পৌঁছানো যায়, কাজটা ততটাই জটিল। প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় শাসনকালে শাসকবর্গ ইতিহাস রচনায় পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। এপ্রথার বিলোপ হয় নি, আধুনিক শাসকবর্গও নিজের নাম ইতিহাসের পাতায় দেখতে শকুন দৃষ্টি সর্বদাই জাগিয়ে রেখেছে। কিন্তু ঘটনা হলো, ইতিহাস চর্চাতে ও ইতিহাসের বিকাশে পৃষ্ঠপোষকতার ইতিহাস, ইতিহাসের অবমাননা তো বটেই, ঘোর স্বার্থাণ্বেষীও বটে। ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মানভূম আন্দোলনকে মোটামুটি দু'ভাগে ভাগ করা যেতে পারে, স্বাধীনতার পূর্বের মানভূম আন্দোলন এবং স্বাধীনতার পরের মানভূম আন্দোলন। স্বাধীনতার পূর্বের মানভূম আন্দোলনের সংগ্রামী ইতিহাসের ইতিহাস রচনায় কলমের উপর ছড়ি চালানোর ইতিহাস আজো স্বমহিমায় বিরাজমান। নীল বিদ্রোহের ঢেউ আছড়ে পড়েছিল বলরামপুরেও। বলরামপুর ও সংলগ্ন বেড়াদা, বড়েদা, বুরুডি, লালডি সহ বিভিন্ন গ্রামে নীলের চাষ হত। নেকড়ে গ্রামে এখনও নীলকুঠির ভগ্নাবশেষ রয়েছে। জলপা লায়া, গঙ্গানারায়ণ সিং, চয়ন মাহাত, বুলি মাহাত নামে কৃষক সেই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই বিদ্রোহ সে সময় বলরামপুর-সহ গোটা এলাকা উত্তাল হয়ে উঠেছিল। ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা, বিহার, ওড়িশার দেওয়ানি লাভ করার পরে জমি জরিপ করে খাজনা নির্ধারণ করে। কিন্তু কৃষকরা খাজনা দিতে রাজি না হওয়ায় শুরু হয় কৃষক বিদ্রোহ। 1767 সাল থেকে বলরামপুর, বরাবাজার, কুইলাপাল, মানবাজার প্রভৃতি জায়গায় শুরু হয়ে যায় কৃষক বিদ্রোহ। সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে কৃষকদের এই সংগ্রাম কৃষক বিদ্রোহ নামে পরিচিত। সেই সংগ্রামের অন্যতম ক্ষেত্র ছিল এই বলরামপুর। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় জলপা লায়া, গঙ্গানারায়ণ সিং দের নামগুলোতে বুর্জোয়াদের কলমের কালি শেষ হয়ে গেলো। চয়ন মাহাত, বুলি মাহাত রয়েগেলে আমাদের মনের প্রতিটি কোনায়। 1769 খ্রিস্টাব্দ থেকে 1799 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চুয়াড় বিদ্রোহ চলে বিভিন্ন নেতার হাত ধরে। 1767 খ্রিস্টাব্দে ঘাটশিলায় ধলভূমের রাজা জগন্নাথ সিংহ প্রথম ধল বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। চুয়াড়রা এই বিদ্রোহে সক্রিয় ভাবে অংশ নেয়। 1771 সালে ধাদকার শ্যামগঞ্জনের নেতৃত্বে চুয়াড়রা বিদ্রোহ ঘোষণা করে ও ব্যর্থ হয়। এপ্রিল 1778 সালে সরাইকেলা অঞ্চলে চুয়াড় বিদ্রোহের ডাক দেন। কিন্তু 5 ই এপ্রিল শিলির নিকট লোটা গ্রামে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। শহীদ রঘুনাথ মাহাতই প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামী যিনি শহীদ হন । কিন্তু 1798-99 খ্রিস্টাব্দে আবার দুর্জন সিংহ নিজেকে স্বাধীন তালুকদার ঘোষনা করেন ও কোম্পানির খাজনা দিতে অস্বীকার করেন ফলত তাকে গ্রেপ্তার ককরার নির্দেশ দেয় সরকার। 1798 সালের মার্চ মাসে রাইপুর পরগনায় শুরু হয় চুয়াড় বিদ্রোহ। ক্রমে তা অম্বিকানগর, সুপুর, বাঁকুড়ার দক্ষিন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। তার নেতৃত্বে এই বিদ্রোহ সবচেয়ে ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল, কিন্তু কোম্পানির সেনাদল নির্মম অত্যাচার করে এই বিদ্রোহ দমন করেছিল। নৃসংশভাবে বিদ্রোহীদের হত্যা করে তারা।গাছের ডালে তাদের ফাঁসি দিয়ে মৃতদেহ ঝুলিয়ে রেখে ত্রাস সৃষ্টি করে গ্রামের সাধারণ মানুষদের মধ্যে। রাণী শিরোমণির আমলেও চুয়াড় বিদ্রোহ ঘটে এবং নাড়াজোলের রাজা ত্ৰিলোচন খানের দ্বারা চুয়াড়রা পরাজিত হয়। দ্বিতীয় চুয়াড় বিদ্রোহের সময় ইংরেজ সরকার রাণী শিরোমণিকে ওই বিদ্রোহের নেতা ভেবে 1799 খ্রীস্টাব্দে বন্দী করে। কিন্তু চুয়াড় বিদ্রোহের কমবেশী সব নেতারাই ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নিলেও শহীদ রঘুনাথ মাহাতোর ইতিহাস লিখতে ইতিহাসবীদদের পাতা শেষ হয়ে যায়। 1855 সালে সাঁওতালরা সশস্ত্র সংগ্রাম করেছিল তাদের অধিকার আদায়ের জন্য। তারা এ যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল ইংরেজদের শাসন-শোষণ, সুদখোর, মহাজন ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। এ যুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিল বৃটিশ সৈন্য ও তাদের দোসর অসৎ ব্যবসায়ী, মুনাফাখোর ও মহাজনদের অত্যাচার, নিপীড়ন ও নির্যাতনের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করা এবং একটি স্বাধীন সার্বভৌম সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা। সান্তাল হুলের ইতিহাস হতে জানা যায় দামিন-ই কোহ ছিল সাঁওতালদের নিজস্ব গ্রাম, নিজস্ব দেশ। কলিয়ান হরাম ছিলেন সাঁওতাল বিদ্রোহের ইতিহাসের লিপিকার এবং সাঁওতালদের গুরু। তিনি তাঁর "হরকোরেন মারে হাপরাম্বো রিয়াক কথা" শীর্ষক একটি রচনায় সাঁওতাল বিদ্রোহের ইতিবৃত্ত রেখে গেছেন। এই ইতিবৃত্তে সাঁওতাল বিদ্রোহের নায়ক সিধু ও কানুর সংগ্রাম-ধ্বনি, যথাঃ "রাজা-মহারাজাদের খতম করো", "দিকুদের গঙ্গা পার করে দাও", "আমাদের নিজেদের হাতে শাসন চাই" প্রভৃতি লিপিবদ্ধ আছে। হ্যাঁ, এই সিধু-কানু-চাঁদ-ভৈরবদের সাথেই আন্দোলনের পুরোভাগে দায়ীত্বে ছিলেন গড্ডা জেলার চানকু মাহাতোর মতো বলিষ্ঠ যুবক। পরবর্তী 1856 সালে ফাঁসির দড়িতে জীবন ও ইতিহাস দুটোই বিসর্জন দেন। ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া এলাকার বালিজুড়ি গ্রামে 1913 সালে জন্মগ্রহণ করেন। মাধ্যমিক শিক্ষার পরেই মাত্র 18 বছর বয়সে মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশকে ব্রিটিশ শাসনাধীন থেকে মুক্ত করতে নিজেকে উৎসর্গ করেন। ঝাড়গ্রাম এলাকায় জাতীয় কংগ্রেসের গুরুদায়ীত্ব পান। পরবর্তীকালে লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে ব্রিটিশ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন এবং পরে কারাবন্দী হন , তবু অহিংসের পথ ছাড়েননি। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে আবারো বিপ্লবীক কাজে জড়িত থাকেন। পরবর্তী সময়ে আবারো দু'বার ব্রিটিশ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে জেলবন্দি হন, তিনি আর কেউ নন, ঝাড়গ্রামের বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী মাননীয় অবিনাশচন্দ্র মাহাত মহাশয়। পক্ষাঘাতে প্রায় আড়াই বছর ধরে শয্যাশায়ী থেকে 25 শে মার্চ 2016 সালে 103 বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসাবে সরকারী ভাতার তালিকায় নাম উঠলেও ইতিহাস মুখ ফিরিয়েছে। 1920 খ্রিস্টাব্দের নাগপুর অধিবেশনে কংগ্রেস এই কর্মসূচি গ্রহণ করে গান্ধিজিকে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পরিচালনার সর্বময় দায়িত্ব অর্পণ করেন । জাতিধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষ অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দিয়েছিলেন । অসংখ্য ছাত্র স্কুল, কলেজ বর্জন করে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল । দেশবাসীর উদ্যোগে ছাত্রছাত্রীদের বিকল্প শিক্ষার ব্যবস্থা হিসাবে কাশী বিদ্যাপীঠ, বারাণসী বিদ্যাপীঠ, গুজরাট বিদ্যাপীঠ, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া প্রভৃতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয় । ডক্টর জাকির হোসেন, আচার্য নরেন্দ্র দেব, লালা লাজপত রায় প্রমুখ শিক্ষাবিদগণ এই সব নব প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন । মতিলাল নেহরু, ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদ, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস প্রমুখ আইনজীবীগণ আইন ব্যবসা ত্যাগ করে অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেন । সুভাষচন্দ্র বসু সিভিল সার্ভিস থেকে পদত্যাগ করে এবং জওহরলাল নেহরু এলাহাবাদ হাইকোর্ট ছেড়ে অসহযোগ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন । মহাত্মা গান্ধির ডাকে ডঃপ্রফুল্ল ঘোষ সরকারি উচ্চপদে ইস্তফা দিয়ে, প্রফুল্ল সেন, অজয়্ কুমার মুখার্জি উচ্চশিক্ষার মোহ বর্জন করে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন । এভাবে একে একে মেদিনীপুরের যাদুগোপাল মুখোপাধ্যায়, নদিয়ার হেমন্ত সরকার, বরিশালের যতীন সেন, ময়মনসিং -এর ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী ******************* প্রমুখ আরও অনেকে তাঁদের সঙ্গীসাথীদের নিয়ে এগিয়ে এলেন । অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে গড়ে উঠল জাতীয় মুক্তিবাহিনী । শুধু ছাত্র ও বুদ্ধিজীবী মহল নয়, দেশের শ্রমিক শ্রেণি কলকারখানা ছেড়ে এবং কৃষক শ্রেণি ও গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষও এই অসহযোগ আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন । সীমান্ত প্রদেশের পাঠান, মেদিনীপুরের কৃষক, মহারাষ্ট্রের শ্রমিক, উত্তরপ্রদেশের ক্ষেতমজুর, শিক্ষিত ও অশিক্ষিত সকলে এই আন্দোলনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেছিলেন । ঘরে ঘরে ত্যাগের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল । সমস্ত দেশ জুড়ে গান্ধিজি যে অহিংস বাহিনী গড়ে তুললেন তারা পোশাকে স্বতন্ত্র, আচরণে বিনম্র, প্রতিজ্ঞায় অটল, এবং ব্যক্তিত্বে অনন্য । তাদের পরণে খদ্দরের ধুতি, মাথায় টুপি, প্রত্যেকেই যেন আত্মত্যাগ ও শুভ্রতার প্রতীক । অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের বিপুল আগ্রহ লক্ষ্য করে জওহরলাল নেহরু বলেছিলেন, "আমরা দেখলাম যে সমস্ত গ্রামাঞ্চল উদ্দীপনার এক আশ্চর্য উন্মাদনায় ভরপুর ।" আমেদাবাদে গৃহীত এক সিদ্ধান্ত অনুসারে গান্ধিজি 1922 খ্রিস্টাব্দের 4 ফেব্রুয়ারি সুরাট জেলার বরদৌলিতে গণ আইন অমান্য আন্দোলনের এক কর্মসূচি ঘোষণা করেন । এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে সারা দেশে বিপুল উত্সাহ ও উদ্দীপনার সঞ্চার হয় । কিন্তু এই আন্দোলন শুরুর আগেই 1922 খ্রিস্টাব্দের 5 ই ফেরুয়ারি উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলার চৌরিচৌরায় একদল হিংসাত্মক জনতা এক পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন লাগিয়ে 22 জন পুলিশ কর্মচারীকে পুড়িয়ে মারে । গান্ধিজির কানে এই সংবাদ পৌঁছুলে তিনি তত্ক্ষণাৎ আন্দোলন বন্ধের আদেশ দেন । সারাদেশ তাঁর এই আদেশে স্থম্ভিত হয় । মতিলাল নেহরু, জওহরলাল নেহরু সুভাষচন্দ্র বসু গান্ধিজির এই সিদ্ধান্তের সমালোচনায় মুখর হন । কেউ একে 'জাতীয় বিপর্যয়' কেউ 'পর্বত প্রমাণ ভুল' বলে মন্তব্য করেন । তথাপি কংগ্রেস কার্য নির্বাহক সমিতি গান্ধিজির এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন। (Class X- 6th chapter) উপরি *************** চিহ্ন জায়গাতে পড়তে পড়তে আমিও বারবার ভেবেছি, এই বুঝি লেখা আছে, মানভূমের গোকুল মাহাত, গণেশ মাহাত, সহদেব মাহাত, শীতল মাহাত, মোহন মাহাত। কিন্তু না, দুঃখিত, সেটা নেই। কলমের কালি সবার জন্যই কম পড়েছে। মনে আছে?-'জঙ্গলমহলের "সিধু জ্যাঠা"-সুধাকর মাহাতকে। 1928 সালে ঝাড়গ্রামের "ধোবোধোবিন" গ্রামে জন্মগ্রহণ করে প্রাইমারী শিক্ষা শেষের পর 1940 সালে কুমুদকুমারী বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেই বছরের 12 ই May বর্তমান দূর্গা ময়দানে সুভাষচন্দ্র বসু বক্তব্য রাখতে আসেন। সভায় যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন প্রধান শিক্ষক। নিষেধাজ্ঞাকে তুড়ি মেরে হাজির হন ঐ সভায়। তারপর যা হয় এই নন্দলালের দেশে, খবর পৌঁছায় প্রধান শিক্ষকের কাছে। বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হতে হয়। অপমানে তিনিও আর বিদ্যালয় মুখো হন নি। তারপর সক্রিয় স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। দেশ স্বাধীনের পর ষাটের দশকে বাংলা-বিহার-ওড়িশ্যার জঙ্গলমহল এলাকা জুড়ে জল-জমি-জঙ্গলের উপর অধিকারের দাবীতে "বনবাসী আন্দোল" শুরে হলে আন্দোলনের অগ্রভাগে নেতৃত্ত্ব দেন। একসময় (2003-2008) ঝাড়গ্রামের পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচিত সদস্য হলেও ইতিহাসের পাতা কম পড়ে গেছে এই সব সংগ্রামীদের জন্য। 1942 সালের 8 ই আগস্ট, মহাত্মা গান্ধী ভারতছাড়ো আন্দোলনের ডাক দিলে বিদ্যুৎ গতিতে তা সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। মানভূমেও সেই বিদ্যুচ্ছটা পৌঁছায়। এই সময় মানভূমের গ্রামে গ্রামে গড়ে ওঠা শিল্পাশ্রম গুলো ছিল বিপ্লবীদের নিরাপত্তার আশ্রয়স্থল। মানভূম জেলার ততকালীন জাতীয় কংগ্রেসের শীর্ষনেতা অতুলচন্দ্র ঘোষ ও বিভূতিভূষণ দাশগুপ্ত এক সভা থেকে ফেরার পথে গ্রেপ্তার হলে আন্দোলনকে দূর্বল করতে শিল্পাশ্রম গুলো ঘেরাও করে শীর্ষনেতাদের গ্রেপ্তার করে। কিন্তু মানভূমের মানুষদের জাত চিনতে পারে নি, ব্রিটিশ সরকার। এই সময় আন্দোলনকে দূর্বার গতিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য গুরুভার এসে বর্তায়, 'ভজহরি মাহাতো', 'ভীম মাহাতো', 'হেমচন্দ্র মাহাতো', 'কুশধ্বজ মাহাতো'-দের মতো তারুণ্যে ভরা বিপ্লবীদের উপর। তারপর বান্দোয়ান থানার জিতান গ্রামে নবীন নেতারা আন্দোলনের কর্মপদ্ধতি নিয়ে আলোচনার ডাক দেন। ব্যাস, তারুণ্যে ভরা বিপ্লবীরা তো পিছু হটতে নারাজ। ইতিহাস গবেষক প্রদীপ মন্ডলের কথায়, 1942 সালের 29 শে সেপ্টেম্বর বান্দোয়ান ও বরাবাজার থানা দখল করে যৌবনে বরা বিপ্লবীর দল। থানাতে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, স্থানীয় মদ, ভাটি, ডাকঘর, পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে দেওয়া হয়। পথে ঘাটে গাছের কুঁড়ি কেটে রাস্তা অবরোধ করা হয়। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে টেলিফোন ব্যবস্থা কেটে দেওয়া হয়। এই সময়, ব্রিটিশ পতাকা ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার মতো সাহস দেখাতে পেরেছিল এই তরুণের দল। সেদিনই স্বপ্নের সেই উড়ান জাতীয় তেরঙ্গা পতাকা প্রথম উড়েছিল মানভূমের বুকে। কিন্তু না, এ ঘটনা ইতিহাস হয় নি, ঠাঁই পায়নি ইতিহাসের পাতায়। এ ঘটনা ইতিহাস হলে কংগ্রেসী নেতাদের যে মুখ পুড়তো। পরেরদিন, 30 শে সেপ্টেম্বর কয়েকশো সত্যাগ্রহী মানবাজার থানা ঘেরাও করেন, কিন্তু এ যে মীরজাফরের দেশ, পুলিশের কাছে আগাম খবর থাকায় থানা চত্ত্বরে ঢোকা মাত্র নির্মম ভাবে গুলি চালায় পুলিশ। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন তরুণ দুই তাজা প্রান- শহীদ গোবিন্দ মাহাত ও চুনারাম মাহাত।(সুত্র: সমীর দত্ত, আনন্দবাজার পত্রিকা,14 ই আগস্ট 2017) ভজহরি মাহাতো পরবর্তীকালে মানভূমের সাংসদের তালিকায় ঠাঁই হলেও ইতিহাসের কালি শেষ হয়ে গিয়েছে। এমনকী ঠাঁই হয় নি, শহীদ গোবিন্দ মাহাতো ও চুনারাম মাহাতো দের জন্যও কালিও পাতা দুটোই কম পড়েছে। বঙ্গভুক্তি ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের প্রেক্ষাপট দেখলে বোঝা যাবে যে, 1765 খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় শাহ আলম বক্সারের যুদ্ধেপরাজিত হলে তিনি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকেবিহার ও উড়িষ্যা সমেত সমগ্র বাংলার দেওয়ানী দিতে বাধ্য হন। কোম্পানি বাংলার জঙ্গলমহল এলাকায় কর সংগ্রহ করা শুরু করলে তাঁরা প্রশাসনিক সুবিধার জন্য এই এলাকাকে 1773 খ্রিষ্টাব্দে পাঞ্চেত, 1805 খ্রিষ্টাব্দে জঙ্গল মহল এবং 1833 খ্রিষ্টাব্দে মানভূম এই তিন ভাগে ভাগ করেন। মানভূম জেলার সদর দপ্তর হয় মানবাজার। এই জেলা বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাঁকুড়া জেলা ও বর্ধমান জেলা এবং ঝাড়খন্ড রাজ্যের ধানবাদ, ধলভূম ও সেরাইকেলা খার্সোয়ান জেলারঅংশ নিয়ে 7896 বর্গমাইল এলাকা জুড়ে তৈরী করা হয়। পরবর্তীকালে 1845, 1846, 1871 ও 1879 খৃষ্টাব্দে মানভূমকে আরো ভাগ করা হয়। 1911 খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ রদ হলেও বাংলা ভাষাভাষী সমগ্র মানভূম ও ধলভূম জেলাকে নতুন তৈরী বিহার-উড়িষ্যা রাজ্যের অন্তর্গত করা হয়। এই বিভক্তির ফলে ঐ অঞ্চলের নেতৃবৃন্দ প্রতিবাদ জানালেও ঐ সিদ্ধান্ত রদ হয়নি। জাতীয় কংগ্রেসের 1920 খ্রিষ্টাব্দের নাগপুর অধিবেশনে ভাষাভিত্তিক প্রদেশ পুনর্গঠনের দাবী আনুষ্ঠানিক ভাবে গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু 1935 খ্রিষ্টাব্দে বিহারে জাতীয় কংগ্রেস মন্ত্রীত্ব লাভ করার পর ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদের সভাপতিত্বে 'মানভূম বিহারী সমিতি' নামক এক সংগঠন গড়ে ওঠে। এর বিপরীতে মানভূম জেলার বাঙ্গালীরা ব্যারিস্টার পি আর দাসের সভাপতিত্বে 'মানভূম সমিতি' নামক সংগঠন তৈরী করেন। বিহার সরকার আদিবাসী ও উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে প্রাথমিক স্তরের বিদ্যালয় খুলতে শুরু করলে বাঙ্গালীরাও বাংলা স্কুল খুলতে তৎপর হয়ে পড়েন। এই সময় সতীশচন্দ্র সিংহ রাঁচি, পালামৌ, সিংভূম ও মানভূম জেলা নিয়ে ছোটনাগপুর নামক এক নতুন প্রদেশ গঠন বা বাংলার সঙ্গে পুনরায় সংযুক্তির প্রস্তাব করেন। 1947 খ্রিষ্টাব্দে ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পর থেকে জাতীয় কংগ্রেসের ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের নীতির বাস্তব রূপায়নের দাবিতে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে আঞ্চলিকতা বেড়ে উঠতে শুরু করে। সেই পরিস্থিতিতে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীজওহরলাল নেহরু দেশের স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তাকে বিবেচনা করে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রদেশ গঠনের সুপারিশ করেন এবং সেই হিসেবে ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন বা দার কমিশন নিয়োগ করেন। 1948 খ্রিষ্টাব্দে্র ডিসেম্বর মাসে কমিশন মত দেয় যে, স্বাধীনতার সাথে সাথে জাতীয় কংগ্রেস তাঁর অতীত অঙ্গীকার থেকে অব্যহতি পেয়েছে এবং শুধুমাত্র ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠন না করে ভারতের ঐক্যবদ্ধতাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এই কমিশনের প্রতিবেদন খতিয়ে দেখার জন্য প্রধানমন্ত্রী, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ও পট্টভি সীতারামাইয়াকে নিয়ে গঠিত তিন সদস্যের এক উচ্চপর্যায়ের কমিটি নিয়োজিত হয় 1948 খ্রিষ্টাব্দ থেকে তৎকালীন বিহার সরকার ঐ রাজ্যের মানুষদের ওপর হিন্দী ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। প্রাথমিক স্তরে ও সরকারি অনুদান যুক্ত বিদ্যালয়ে হিন্দী মাধ্যমে পড়ানোর নির্দেশ আসে, জেলা স্কুলগুলিতে বাংলা বিভাগ বন্ধ করে দেওয়া হয় ও হিন্দীকে বিহার রাজ্যের আনুষ্ঠানিক ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই সময় বাঙলাভাষী সংগঠনের ঘৃণ্য চক্রান্ত সফল হয়। তারা মানভূমের বৃহৎ জনগোষ্ঠী কুড়মী ভাষী অধ্যুষীত মানুষদের ভুল বোঝায়। এবং কিছু মানুষ সেই ফাঁদে পা দিয়ে এক বৃহৎ ভাষার সমাপ্তি ঘোষণা করেন। আর সেই দিন থেকেই শুরু হয় মানভূমের অবক্ষয়। জেলার বাংলাভাষী মানুষদের ক্ষোভ আঁচ করে জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র মুক্তি পত্রিকায় 1948 খ্রিষ্টাব্দের 8 ই মার্চ হিন্দী প্রচার, বাংলা ভাষাভাষীদের বিক্ষোভ ও মানভূম জেলার বঙ্গভুক্তির যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করে সম্পাদকীয় নিবন্ধ প্রকাশি হয়। এই বিষয়টি বিবেচনার জন্য 1948 এর 30 শে এপ্রিল বান্দোয়ান থানার জিতান গ্রামে অতুলচন্দ্র ঘোষের সভাপতিত্বে জেলা কমিটির অধিবেশন হলে সেখানে প্রতিনিধিদের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। ঐ বছর 30 শে মে পুরুলিয়াশহরের অধিবেশনে মানভূমের বঙ্গভুক্তির প্রস্তাব 55-43ভোটে খারিজ হয়ে গেলে অতুলচন্দ্র ঘোষ সহ সাইত্রিশজন জেলা কমিটি থেকে পদত্যাগ করে 1948 খ্রিষ্টাব্দের 14 ই জুন পাকবিড়রা গ্রামে লোক সেবক সংঘ তৈরী করেন। বিহার সরকারবাংলাভাষীদের প্রতিবাদসভা ও মিছিল নিষিদ্ধ করলে মানভূম জেলায় আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। লোক সেবক সংঘ 1949 থেকে 1951 খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সত্যাগ্রহ আন্দোলন এবং 1954 খ্রিষ্টাব্দের 9 ই জানুয়ারি থেকে 8 ই ফেব্রুয়ারি টুসু সত্যাগ্রহ আন্দোলন করে। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি এ আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে যোগদান করে। হাজার হাজার বাংলাভাষী মানুষ কারাবরণ করে। এই সময় বেশ কয়েকটি টুসু সঙ্গীত জনগনের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল। তার মধ্যে একটি হল, শুন বিহারী ভাই তোরা রাখতে লারবি ডাঙ্গ দেখাই এই সময় জননিরাপত্তা আইনের 9 এর 5 নং ধারায় 17 জন টুসু সত্যাগ্রহী এবং ভারতীয় দন্ডবীধির 143, 225,186 ধারায় লোকসেবক সংঘের কর্ণধার অতুলচন্দ্র ঘোষ, লোকসভার সাংসদ ভজহরি মাহাতো, লাবণ্যপারভা ঘোষ, অরুনচন্দ্র ঘোষ, অশোক চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়। অতুলচন্দ্র ঘোষকে হাজারীবাগ জেলে স্থানান্তরিত করা হয়। লোকসভার সদস্য ভজহরি মাহাতো মহাশয়কে সাধারণ অপরাধীদের সাথে হাতকড়াই বেঁধে, কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে আনা হয়, বিচারে 11 মাসের কারাদন্ড হয়। লাবণ্যপ্রভা দেবীকে 1 মাসের কারাদন্ড ও 100 টাকা জরিমানা করা হয়। অরুনচন্দ্র ঘোষ, মানবাজার থানার গগ্দা গ্রামের অমূল্যভূষণ মাহাতো সহ পাঁচজনকে 14 মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়। অশোক চৌধুরী, রামচন্দ্র অধিকারী সহ আরো 23 জন আন্দোলনকারীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডের শাস্তি দেওয়া হয়। আশ্চর্য্যের ঘটনা হলো যে, যেটা মনে হয় পৃথিবীর যে কোন আন্দোলনে বিরলতম ঘটনা। বাবুলাল মাহাতো নামে এক 15 বছরের জন্মান্ধ কিশোরকে 3 মাসের কারাদন্ড ও 200 টাকা জরিমানা করা হয়, এবং 9 বছরের সুধন্ধাকে 9 মাসের কারাদন্ড ও 1000 টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার টাকা আদায়ের জন্য সুধন্ধার বাড়িতে পুলিশ 21 শে ফেব্রুয়ারী মালামাল ক্রোক করার চেষ্টা করে। এছাড়াও জরিমানা আদায়ের নামে মানবাজার থানার পিটিদারী গ্রামে দন্ডপ্রাপ্তদের বাড়িতে পুলিশ তালা ভেঙে ঢুকে নারীদের প্রতি আপত্তিকর আচরণ করে। এই আন্দোলনের ফলে 1953 খ্রিষ্টাব্দের 29 শে ডিসেম্বর ভারত সরকার সৈয়দ ফজল আলির সভাপতিত্বে, হৃদয়নাথ কুঞ্জরু ও কবলম পানিক্করকে নিয়ে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন তৈরী করে। এই কমিশন 1955 খ্রিষ্টাব্দের 5 ই ফেব্রুয়ারি থেকে মানভূম জেলায় তদন্ত করে ঐ বছর 10 ই অক্টোবর তাঁদের বক্তব্য জমা দেন। তাঁদের বক্তব্যে মানভূম জেলা থেকে বাঙালী অধ্যুষিত এলাকাগুলি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে 19 টি থানা নিয়ে পুরুলিয়া জেলা নামে এক নতুন জেলা তৈরী করার প্রস্তাব দেন। তাঁরা মানভূম জেলা থেকে ধানবাদ মহকুমার 10 টি থানা ও পুরুলিয়া মহকুমার 2 টি থানা বিহার রাজ্যে রেখে দেওয়ার প্রস্তাব করেন। অপরদিকে ধলভূম পরগণায় বাংলাভাষীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা স্বীকার করেও যেহেতু ভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ ঐ জেলায় বসবাস করেন সেই কারণে কমিশন জামসেদপুরকে পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত করতে বা ধলভূম পরগণা ভেঙ্গে বাংলায় আনতে রাজি ছিলেন না। এই প্রস্তাবে 1956 খ্রিষ্টাব্দের 17 থেকে 20 শে জুন বিহারপন্থীরা মানভূম জেলায় ধর্মঘটের ডাক দেন। অপরদিকে বাংলা ভাষা আন্দোলনকারীরা ধানবাদ বিহারের অন্তর্ভুক্তিতে খুশি ছিলেন না 1956 খ্রিষ্টাব্দের 23 শে জানুয়ারী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায় ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীকৃষ্ণ সিং পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার উভয় রাজ্যের সংযুক্ত করে পূর্বপ্রদেশ নামে এক নতুন প্রদেশ গঠনের প্রস্তাবনা করেন। তাঁরা প্রস্তাব দেন যে, ঐ প্রদেশের সরকারি ভাষা হিসেবে হিন্দী ও বাংলা উভয়েই স্বীকৃত হবে, মন্ত্রীসভা, বিধানসভা, পাবলিক সার্ভিস কমিশন একটি করে থাকলেও হাইকোর্ট থাকবে দুইটি। এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে প্রবীণ কংগ্রেস নেতারা ছাড়াও বামপন্থী দলগুলিও প্রতিবাদ করেন। দুই রাজ্যে এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সত্যাগ্রহ আন্দোলনের মধ্যে বিহার বিধানসভায় 24 শে ফেব্রুয়ারী প্রস্তাবটি পাশ হয়ে যায়। লোক সেবক সংঘের কর্মীরা মাননীয়া ভাবিনি মাহাতো ও লাবণ্যপ্রভা ঘোষ এর নেতৃত্বে 1956 খ্রিষ্টাব্দের 20 শে এপ্রিল পাকবিড়রা গ্রাম থেকে বাঁকুড়া, বেলিয়াতোড়, সোনামুখী, পাত্রসায়র, খন্ডঘোষ, বর্ধমান, পান্ডুয়া, মগরা, চুঁচুড়া, চন্দননগর, হাওড়া হয়ে কলকাতাশহরের দিকে শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা শুরু করে 6 ই মে কলকাতা পৌঁছায়, 7 ই মে মহাকরণ অবরোধের কর্মসূচী অনুসারে বিনয়-বাদল-দীনেশ বাগ পৌঁছছে 956 জন কারাবরণ করেন। এই ঘটনার তিন দিন আগে 4 ঠা মে উভয় রাজ্যের সংযুক্তির প্রস্তাবনা বাতিল হয়ে যায়। 1956 খ্রিষ্টাব্দের 17 ই আগষ্ট বাংল-বিহার সীমান্ত নির্দেশ বিল লোকসভায় ও 28 শে আগষ্ট রাজ্যসভায় পাশ হয়। 1st সেপ্টেম্বর এতে ভারতের রাষ্ট্রপতি সই করেন। এর ফলে 1956 খ্রিষ্টাব্দের 1st নভেম্বর 2407 বর্গ মাইল এলাকার 11,69,097 জন মানুষকে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের নতুন জেলা পুরুলিয়া তৈরী হয়। সম্পূর্ণ ধানবাদ মহকুমা বিহার রাজ্যে রয়ে যায়। এরপরো আমরা 1971 র 21 শে জুলাই দিনটিকে ভাষা শহীদ দিবস হিসাবে পালন করি। কিন্তু এটা অনস্বীকার্য যে, ভাষা আন্দোলন প্রথম শুরু হয় মানভূমের বুকেই, 1912 সালে।বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় বাঙলাকে ততকালীন বিহারের সাথে যুক্ত করলে তথাকথিত ততকালীন মানভূম নিয়ে সব থেকে বেশী ঝামেলায় পড়ে। এখানের ভাষা না হিন্দী, না বাঙলা। এক স্বতন্ত্র ভাষা কুড়মালী তথা মানভুঁই ভাষা। এই বৃহত্তর অঞ্চলের স্বাধীন ভাষীদের উপর বাঙালীর চক্রান্তে কিছু কুড়মী সেই ফাঁদে পা দিয়ে ভাষা আন্দোলন শুরু করে, কিন্তু হায়রে মানভূম, তোর যে পোড়া কপাল, ইতিহাসের এদিকে আসার যে নুন্যতম ট্রেন যোগাযোগও নেই। তাইতো শহীদেরা উপেক্ষিত আর কংগ্রেসী পত্নীদ্বয় একজন হলেন মানভূম কেশরী আরেকজন হলেন মানভূম জননী, যে কিনা বৃহত্তর এলাকার স্বাধীন ও স্বতন্ত্র ভাষাকে বাঙলা বলে চালিয়ে দিয়ে ইতিহাস থেকে এক স্বাধীন ভাষার অবলুপ্তি ঘটিয়ে হয়ে গেলেন মানভূম জননী। ভারতের প্রথম পতাকা জাতীয় তেরঙ্গা উত্তোলিত হয় এই মানভূমেই। প্রণাম তোমায়। আর মানভূমের ইতিহাস লিখতে হলে ঐ কালি আর কাগজে কুলানো যাবে না। তাই থাক, আপনাদের আর কাগজ নষ্ট করতে হবে না, এই ইতিহাস মানভূম বাসীর গর্বের ইতিহাস। আপনাদের কালির আঁচড় মুছে যাবে, কিন্তু প্রতিটি মানভূম বাসীর হৃদয়ে এই গর্বের ইতিহাস স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। শহীদ রঘুনাথ মাহাত অমর রহে শহীদ গোবীন্দ মাহাত অমর রহে শহীদ চুনারাম মাহাত অমর রহে জহার (Reference: Wikipedia) " ইতিহাসে ঠাঁই না পাওয়া ইতিহাস" ---সুজিত কুমার মাহাতো
যে জাতি নিজের ইতিহাস জানে না, সে জাতি নিজের ভবিষ্যৎ তৈরী করতে পারে না। তাই নিজের ইতিহাসকে জানুন।এই বৃহৎ ঝাড়খণ্ডে সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা আছে তা হল কুড়মিদের। আপনাদের জানার ইচ্ছা হয় না এত বড় জনসংখ্যা বিশিষ্ট জাতি আর দেশের স্বাধীনতা সংগ্ৰামে তার অবদান কি? আমি ছোট থেকে যে ইতিহাস পড়েছি তাতে কোথাও কোনোকিছু খুঁজে পায়নি। এই সমাজ আন্দোলন এর সাথে যুক্ত হয়ে এদিক ওদিক থেকে সঠিক খবর সংগ্ৰহ করলাম। আর দেখলাম আমার জাতির অবদান। সেই চূয়াড় বিদ্রোহ থেকে শুরু করে ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্যন্ত যতজন কুড়মি শহীদ হয়েছেন তার সঠিক হিসাব করা মুশকিল। তবু এখানে আমি তাদের অনেকের নাম বলব এবং তাদের কৃতিত্বের কথা লিখব। এখনতো অনেকে সবাই জেনেই গেছেন ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্ৰামে দেশের প্রথম শহীদ রঘুনাথ মাহাতোর নাম। যিনি ঐতিহাসিক চূয়াড় বিদ্রোহের ধলভূমে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। যাকে ব্রিটিশেরা গুলি করে হত্যা করেছিল।চূয়াড় বিদ্রোহের সময় রঘুনাথ মাহাতোর সহযোগী প্রসাদী মাহাত ধানবাদ জেলায় নেতৃত্ব দেন। এছাড়াও চুড়ু মাহাত বেলিয়াপুর ধানবাদ জেলার রঘুনাথ মাহাতোর সহকারী ছিলেন।এরপর আসি বুলি মাহাতোর কথায় যিনি গঙ্গা নারায়ণ সিং এর সাথে দ্বিতীয় চূয়াড় বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন।এছাড়াও ঝগড়ু মাহাতো ছাড়াও অনেকে শহীদ হন। এরপর আসি নীল বিদ্রোহের 1843-1848 গোপাল মাহাতো নেতৃত্ব দেন। এরপর সাঁওতাল বিদ্রোহের সময় গড্ডা জেলায় চানকু মাহাতো নেতৃত্ব দেন। এছাড়াও সিপাহী বিদ্রোহে সুকদেব মাহাত সহ এগারোজনের একসাথে ফাঁসি হয়।এছাড়াও উড়িষ্যার মেড়ি আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন বকা মাহাত,রজনী মাহাত, সুচাঁদ মাহাত,কালিচরণ মাহাত, গোপিনাথ মাহাত, কালিয়া মাহাত প্রমুখ অংশগ্ৰহণ করেন। এরপর কুড়মিরা অহিংস অসহযোগ আন্দোনেও সক্রিয়ভাবে অংশগ্ৰহণ যোগ দেয়। এই আন্দোলনে পাঁচজন তরতাজা কুড়মি যুবক শহীদ হন। এরা হলেন গোকুল, মোহন, শীতল, সহদেব, গণেশ মাহাতোরা। এছাড়াও অনেকের তখন জেলও হয়। মহাত্মা গান্ধীর আইন অমান্য আন্দোলনের সময় হাজারিবাগ জেলে বন্দি হয়েছিলেন গিরীস মাহাতো, নানকু চন্দ্র মাহাতো, গোবিন্দ মাহাতো, দশরথ মাহাতো,চুনারাম, মথন মাহাতো প্রমুখেরা। এছাড়াও ভাগলপুর জেলে বন্দি হয়েছিলেন পদক মাহাতো। 1941সালে সত্যাগ্ৰহ করার জন্য সাগর মাহাত, ভজহরি মাহাত, ভীম মাহাত কারাবরণ করেন। এছাড়াও 1942 সালে সত্যকিঙ্কর মাহাতোকে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় মানবাজার থেকে কারাবরণ করতে হয়। 1942 সালে মানবাজার থানা ঘেরাও করার সময় চুনারাম মাহাতো এবং গোবিন্দ মাহাত শহীদ হন। এছাড়াও ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্ৰহণ করেছিলেন(ধানবাদ-পারবাসনিয়া)এর জগদীশ মাহাত, এছাড়াও ঐ জেলারেই জগদীশ মাহাত সক্রিয় অংশগ্ৰহণ করেন।এছাড়াও আরো অনেকের অংশগ্ৰহণ আছে। এই কুড়মি জাতি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করেই সি এন টি আ্যক্ট আদায় করে নিয়েছিল এবং এস টি তালিকায় নামও ছিল কুড়মিদের। কিন্তু আজ স্বাধীনভারতে সি এন টি আ্যক্ট থাকা সত্বেও আইনের ফাঁকে কুড়মিদের জমি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। আর ষড়যন্ত্র করে এস টি তালিকা থেকে হটিয়ে দিয়ে আজ বৃহৎ ঝাড়খণ্ডকেই বিহারী ইউ পি এবং বাঙালরা উপনিবেশ করে ফেলছে। তাই এত রক্ত ঝরিয়েও এখনো এ জাতি পরাধীন। তাই এ পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্ত করার জন্য সমগ্ৰ বন্ধুদের অনুরোধ করব, সবাই লড়ুন। কৃতজ্ঞতা স্বীকার - Rakesh Mahato জয় ঝাড়খণ্ড। জয় ভারত। জয় গরাম। কুড়মী একিন জিন্দাবাদ।