Saturday, March 17, 2018

করম পরবের কহনি




করম পরবের কহনি



করম পূজা উপলক্ষে একটা গল্প বলা হয়,  যারা করম করেছে  তারা সবাই এটা শুনে থাকবে,  সেই গল্প টা আজ আমরা দিচ্ছি।।  গল্প বলার সময় সব শ্রোতা কে মাঝে মাঝে “হুঁ ” বলতে হয় জানতো না হলে গল্প বন্ধ হয়ে যেত,,  তো আমি ” হুঁ ” দিতে বলছি না গল্প টা পড়ার পর লাইক ও কেমন লাগছে সেটা জানিয়ে কমেন্ট দিতে অনুরোধ করছি,,
                হামার করম ভাইয়ের ধরম
সে অনেককাল আগের কথা,  করমু আর ধরমু নামে দুই ভাই ছিল।  চাষবাস করে তারা সুখে সাচ্ছন্দেই থাকত,  ভাদ্র মাসের পার্শ্ব একাদশীর দিনে তারা করম ঠাকুরের পূজা করত,।  কিন্তু একবার করমু করম ঠাকুরের পূজা করে বাসি ভাত,  বাসি তরকারীর বদলে গরম ভাত আর গরম তরকারী দিয়ে পারন করল।  তার ফলে করম ঠাকুরের গায়ে জ্বালা শুরু হলো।  আর তার কোপে করমুর সংসারে দুঃখ দুর্দশা নেমে এলো।
করমুর সংসারে অভাব অনটন শুরু হলো ,  লোকের ঘর মুনিষ খটতে যেতে শুরু করলো কিন্তু তবু তাদের পেট ভরে খাবার জোটে না,  একদিন করমু আর তার বউ ভাই ধরমু এর চাষের কাজে গেল।  দুপুরে ধরমু সবাইকে খেতে দিল কিন্তু করমু আর তার বউ এর কাছ যখন এল তখন আর খাবার এ কুলাল না।  করমু ভাবল পরে হয়তো তার ভাই খাবার নিয়ে আসবে কিন্তু সন্ধে হয়ে গেল কেউ খাবার নিয়ে এল না, ।  এতে রেগে গিয়ে করমু তার বউ কে বললে চল আমারা যতটা ধান লাগিয়েছি সব নষ্ট করে দেব,। এই বলে তারা দুজনে যেই না ক্ষেতে পা বাড়িয়েছে অমনি হঠাত শুনতে পেল কে যেন বলছে খবরদার আর এক পাও বাড়াবি না,  তুই গরম ভাতে পারন করেছিলি বলে তোর এই দশা,  করম ঠাকুর তোর উপরে রেগে গেছেন,  তোর কপাল বাম হয়েছে তুই সাত সমুদ্র তের নদী পেরিয়ে করম ঠাকুরের কাছে যা তবেই তোর এই দুর্দশার মুক্তি ঘটবে। তা শুনে সে ত্র বউ কে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে,  সেখান থেকেই রওনা দিল,,  সে সারা রাত হাঁটার পর একটা জায়গা তে পৌছাল,  আগের দিন পেটে কোন খাবার জোটেনি তারউপর এত পরিশ্রম তার প্রচন্ড তিষ্টা আর খিদা লেগেছে,  তখন একটা পুকুরের কাছে এসে থামল,  পুকুর থেকে আজলা করে জল তুলে যেই না খেতে যাবে অমনি সে দেখে জলে অনেক পোকা কিলবিল করছে,  তখন সে ফেলে দিয়ে হাঁটতে শুরু করবে তখন পুকুরটি ডেকে বলল ভাই কোথায় যাচ্ছ?  করমু বলল ” আমার করম কপাল বাম হয়েছে তাই করম ঠাকুরের কাছে যাচ্ছি  ।  ” পুকুরটি বলল ” ভাই করম ঠাকুরকে আমার আদ্দাশ জানিয়ে জেনে আসো আমার জলে কেন এত পোকা?  ” করমু ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানিয়ে চলতে শুরু করলো।  কিছুদুর গিয়ে করমু দেখল একটা বড় ডুমুর গাছে অনেক ডুমুর ধরে আছে,  তখন সে ডুমুর তুলে খাঁড়া করে দেখে অসংখ পোকা, ডুমুরের ভিতরে পোকা দেখে মনের দুঃখে আবার হাঁটতে যাবে তখন ডুমুর গাছ ডেকে বলল ভাই কোথায় যাচ্ছ?  করমু বলল আমার করম কপাল বাম হয়েছে আমি করম ঠাকুরের কাছে যাচ্ছি ” তখন ডুমুর গাছ বলল তুমি যাচ্ছ যখন তখন করম ঠাকুর কে আমার আদ্দাশ জানিয়ে আমার ফলে এত পোকা কেন জেনে আসবে।।  করমু হাঁটতে থাকে,  পথের যেন শেষ নেই,  খিদা, তেষ্টা তে দেহ অবসন্ন,  এমন সময় একটা কুঁড়ে দেখতে পেল,  তখন ভাবল যাক এখানে একটু তামাক খেয়ে নিয়ে আবার হাঁটব,  তা সে দরজার কাছে গিয়ে ডাকতে লাগল ” কেউ আছো আমাকে একটু আগুন দেবে??  ভেতর থেকে এক বুড়ি বলল ” বাবা আমার উঠবার উপায় নেই আর আমি দিতেও পারব না, ” করমু উঁকি দিয়ে দেখে আশ্চর্য ব্যাপার বুড়ি একটা কুলা নিয়ে চিংড়িমাছ বেছে চলেছে আর তার পা দুটো উনানে ঢোকান আছে,  উনানে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে কিন্তু বুড়ির পা পুড়ছে না।।

তো বুড়ির এরকম অবস্থা দেখে করমু হতাশ হয়ে চলে যেতে উদ্দত হল  ,  তখন বুড়ি তাকে জিজ্ঞাসা করল ” কোথায় যাচ্ছ ভাই?  ” করমু বলল আমি করম ঠাকুরের কাছে যাচ্ছি। ” বুড়ি বলল বাবা তুমি যাচ্ছ যখন তখন করম ঠাকুরক্র জিজ্ঞাসা করবে,  আমি উনুনে পা ঢুকিয়ে বসে আছি কিন্তু আমার পাও পুড়ছে না আর চিংড়িমাছ বাছাও শেষ হচ্ছে না কেন?  আবার হাঁটতে শুরু করল করমু,  কতক্ষন যে হাটল তা আর তার দিশা নেই,  হাঁটতে হাঁটতে সে দেখল এক প্রকান্ড মাঠের সামনে এসে পড়েছে,  আর সেখানে একপাল গরু চরে বেড়াচ্ছে,  করমু ভাবল গরুর দুধ খেয়েই সে পেট ভরাবে,  এই ভেবে যেই না সে একটা গাভী এর কাছে গেল গাভী টা ছুটে পালাল,  আর অন্য গুলো একই কেউ তো আবার শিং উচিয়ে ছুটে এল তখন সে ভাবল যার কপাল বাম হয় তার হয়ত এরকমি অবস্থা হয়,  সে তখন আবার পথ চলা শুরু করল তখন একটা গাভী এসে জিজ্ঞাসা করল কোথায় যাচ্ছ ভাই?  করমু বললে করম ঠাকুরের কাছে যাচ্ছি তখন গাভী বলল করম ঠাকুরের কাছে যাচ্ছ যখন তখন জিজ্ঞাসা করে আসবে আমাদের কোন বাগাল নেই কেন??  করমু ঠিক আছে বলে আবার চলতে শুরু করল,  হাঁটতে হাঁটতে সে একটা জায়গায় এসে দেখল অনেক গুলো ঘোড়া চরছে,  সে তখন চুপিসারে একটা ঘোড়া র পিঠে চাপতে গেল তখন ঘোড়া লাথি মেরে ফেলে দিয়ে ছুটে পালাল,,   করমু অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটতে শুরু করল তখন প্রধান ঘোড়া তার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল কোথায় যাচ্ছ ভাই,  করমু বলল করম ঠাকুরের কাছে যাচ্ছি ,  ঘোড়া বলল তা যাচ্ছ যখন করম ঠাকুরের কাছে জেনে আসবে আমাদের ক্যিন মআলিক নেই কেন আর আমরা কাউকে পিঠে সওয়ার ও নিতে পারিনা কেন??

এরপর করমু আর থামেনি হেটেই চলেছে,  এতক্ষন সে বুঝতে পেরেছে করম ঠাকুরের কাছে পৌছানোর আগে তার খাওয়া জুটবে না, আর এই পা দুটি ছাড়া পৃথিবী র কোন কিছুর সে সাহায্য পাবে না,  তাই সে প্রায় ছুটতে ছুটতেই এগিয়ে যেতে থাকে হঠাত তাকে থেমে যেতে হয়,  সামনে আর পথ নেই শুধু জল আর জল অথৈ সমুদ্র,  কি করবে ভেবে পেল না করমু,  অথচ সমুদ্র না পেরালে সে করম ঠাকুরের কাছে যেতে পারবে না আর করম ঠাকুরের কাছে না গেলেও না খেয়ে মরতে হবে,  যা হবে হবে বাড়ি গিয়ে না খেয়ে মরার থেকে এখানে মরাই ভাল এই ভেবে সে সেখানে বসে পড়ল,  অনেক কিছু তার মনে পড়তে থাকল  তার বউ এর কথাও মনে,  সে একা বাড়িতে না খেতে পেয়ে কি করছে কে জানে,,  দুঃখে তার কাঁদনা চলে এল।  হঠাত দেখল সমূদ্রের জলে কি যেন। একটা ভাসতে  ভাসতে  তার দিকে আসছে,  করমু ভআল করে ঠাওর করে দেখে একটা প্রকান্ড কুমির,  সে ভাবল না খেয়ে মরার থেকে কুমির এর পপেটে যাওয়াই  ভাল ,  এই ভেবে সে আরো জোরে কাঁদতে শুরু করল ভাবল শেষ বারের মত একটু জোরেই কেঁদে নিই,  তখন কুমির এসে জিজ্ঞাসা করল ভাই কাঁদছো কেন তখন করমু তাকে তার সব দুঃখের কাহানী বলল।  কুমির বলল চিন্তা করোনা ভাই আমি তোমাকে পের করে দেব।  তবে যাচ্ছ যখন জেনে আসবে আমি জলে ডুব দিতে পারি না কেন সব সময় ভেসে থাকতে হয় কেন?  করমু ভাবল কুমির তাকে খেলে খাবে সাহস করে কুমিরের পিঠে চেপে বসিল।।  কুমির তাকে পিঠে বসিয়ে সাঁ সাঁ করে সমুদ্রের জল কেটে এগিয়ে চলল,  এইভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর একদিন তীরে এসে পৌছাল তারা,  করমু নেমেই ছুটতে আরম্ভ করল,  কুমির চিতকার করে বলল ভাই আমার ব্যাপারটাও জেনে আস আর তাড়াতাড়ি আসবে আমি এখানেই তোমার অপেক্ষা করব,,  করমু ছুটতে ছুটতে এক স্বচ্ছ ঝরনার কাছে এসে পড়ল,  সেখানে সে দেখন একজন খুব সুদর্শন ব্যাক্তি জলে ডুবছে আর উঠছে,  তার গা থেকে একরকম চোখ ধাঁধান রশ্মি নির্গত হচ্ছে,।  সে বুঝল এটাই করম ঠাকুর,  সে ছুটে গিয়ে জলে ঝাপ দিয়ে  করম ঠাকুরের পা জড়িয়ে ধরল,  করম ঠাকুর বুঝতে পারল এই সেই করমু তবু জিজ্ঞাসা করল কে তুমি আমার পা ধরলে কেন??  করমু বলল আমাকে ক্ষমা করে দিন প্রভু,  আমি সেই করমু আপনার কোপে আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে,  আমাকে ক্ষমা করে দিন না হলে আপনার পা আমি ছাড়ব না।।।।
হামার করম ভাইয়ের ধরম
করম ঠাকুর দেখলেন করমু অনেক কষ্ট আর দুর্ভোগ পেয়েছে তাকে আর কষ্ট দেওয়া ঠিক না,  করম ঠাকুর বললেন তুই গরম ভাতে পান্না করে আমার গায়ে জ্বালা ধরিয়েছিস তাই তোর এই অবস্থা,  তবে যা ভাদ্র মাসের পার্শ্ব একাদশী তে বাড়িতে করম ডাল পুঁতে আমার পূজা করবি,  আর সকালে নিয়ম মতো বাসি ভাতে পারন করবি তাহলেই তোর সব দুঃখ ঘুচবে । করমু এর পর রাস্তার সবার কথা বলল আর বলল প্রভু এদের ও মুক্তি র উপায় বলে দিন,  এরা আমার অপেক্ষা করছে।  করম ঠাকুর একে একে সবার মুক্তি র উপায় বলে দিল।  এর পর করমু করম ঠাকুর কে প্রনাম করে ফের পথ চলা শুরু করল,  সমুদ্র তীরে এসে দেখে কুমির তার অপেক্ষা করছে।  কুমির বলল ভাই আমার মুক্তি র উপায় টা জেনে এসেছ?  করমু বলল আমাকে আগে ওই পারে পৌছে দাও তার পর তোমার মুক্তি র উপায় বলে দিব।  কুমির তাকে ওপারে পৌছে দিল।  করমু তারপর বলল তুমি অনেক মানুষ খেয়েছ তারমধ্যে অনেক মেয়ে মানুষ ও ছিল তাদের যে সমস্ত গয়না গাটি  তোমার পেটে আছে সেগুলি উগরে বের করে যদি গরিব দুঃখী কে দান কর তাহলেই তুমি আবার ডুবতে পারবে।  কুমির বলল আমি আর গরিব দুঃখী কোথায় পাব,  তুমি  সব নিয়ে যাও। এরপর করমু গয়না গাটি নিয়ে চলতে চলতে ঘোড়া র পালের কাছে এল,  শির ঘোড়া এসে তাকে জিজ্ঞাসা করল ভাই আমাদের মুক্তির উপায় কি তখন করমু বলল তোমাদের পালের একটা ঘোড়া যদি কাউকে দান কর তাহলেই তোমরা মুক্তি পাবে তখন করমু কে একটা ঘোড়া দিয়ে দিল, করমু ঘোড়া র পিঠে চেপে চলতে লাগল বাকি ঘোড়া গুলো বলল আমরা আর কোথায় যাব তুমি আমাদের মালিক আমারা তোমার সাথেই যাব এই বলে সব ঘোড়া তার সাথে যেতে থাকল,  এইভাবে সমস্ত গাভী ও তার হল,  এরপরে সে সেই বুড়ি র কাছে পৌছাল,  বুড়ি বলল বাছা আমার কথা কি জেনে এলি বল।  করমু বলল আপনি উনুনের কাঠে লাথি মেরেছিলে তাই আপনার এই দশা।  আর আপনার উনুনের নিচে অনেক ধন সম্পদ জমা করে রেখছিল আপনার পূর্বপুরুষরা সেই ধন সম্পদ গরিব দুঃখী কে দান করলে আপনি মুক্তি পাবেন,  বুড়ি বলল বাছা আমি আর কোথায় কাকে পাব তুমি সব নিয়ে যাও।  সে সব নিয়ে করমু আবার যেতে থাকল এর পর সে ডুমুর গাছের কাছে পৌছাল,  ডুমুর গাছকে করমু বলল তোমার গোড়াতে ডাকাতে অনেক সোনাদানা লুকিয়ে রেখেছে সে গুলো যদি গরিব দুঃখী কে দান কর তুমি মুক্তি পাবে।  ডুমুর গাছ বলল আমি আর কোথায় কাকে পাব তুমি সব খুঁড়ে নিয়ে যাও।  এভাবে পুকুরের পাড় থেকেও অনেক সোনা দানা মনি মানিক্য পেল সে, তারপর তার সে পুকুরের জল খেল এবং গরু এবং ঘোড়া গুলিকেও পুকুরের জল খায়িয়ে,  ঘরে ফিরে এল। তারপর একাদশী র দিনে ধুম ধাম করে করম ডাল এনে বাড়িতে করম ঠাকুরের পূজা করল আর গরিব দুঃখী কে দান করল , ।।

0 comments: